Monday, 1 October 2018

Tama Barman

             ত     মা            ব     র্ম      ণ



          ছায়াবাজি


 উত্তম এলেই ঈর্ষান্বিত হয়ে উঠতেন বাবা
মা পা ছড়িয়ে বসে পলকহীন খুঁজতেন মেয়েবেলার জড়োয়াদুপুর, ছায়াছবিমত 
আঁকাজোখা শিমুলগাছের তলায় প্যাস্টেলরঙা স্বপ্নের দুইচোখ, সেই তরুণ মিনাকার!
নগরপরিকল্পনার অফিস যাবার আগে
গন্ধনাশক-আহ্নিক সেরে বাবা  গুনে নিতেন,
ঠিক 'টি ফুলের কলি আজ তাঁর  বাগানে
ছায়াছবি থেকে বেরিয়ে তেলকালিমাখাহাত
দুগগা দুগগা  দিলে চৈত্রপূর্ণিমার চাঁদ ডেকে নিত
আরেকছবির ভেতর, মা-কে
বাবা সিনেমাঘর থেকে  আজীবন বেরোতে পারেননি জানতেন, অষ্টসখী রাধা ললিতা 
বিশাখা সুচিত্রা চম্পকলতা রঙ্গদেবী সুদেবী তুঙ্গমায়ের বয়স বেড়েছিল সুচিত্রার 
অসুখে

উত্তম সুচিত্রার প্রয়াণদিবসে বাবা
এখন,
নির্বাকছায়াছবি





             বনলতাসেন গেস্টহাউস


এখনো ফুরায়নি ঘরের আশা ,
এখনো গন্ধবুকে উড়ে বক জীবনানন্দ ভালোবেসে, পানকৌড়ি মুখ তোলে,
বনলতা সেন গভীরপায়ে হেঁটে যায়
দারুচিনি দ্বীপে, সম্মিলিত মেয়েরা ভাঙছে নির্জনতা, অন্ধকার ফুঁড়ে বুনোভোর
হুটহাট নেমে আসে কষ্টের সাথে, প্রতিবাদ মেখে নেয় -ওর গায়ে বনলতা সৌন্দর্য্য
সূর্যমুখী  অগাধপ্রেম, বহুকাল থেকেই জানিয়ে আসছে,
আমরা করব জয়,
আমরা করব জয়
জীবনানন্দমঞ্চের কাছে দাঁড়িয়ে যে কবিরা আচ্ছন্নবুক একটু আগেই  জেনেছে,
কোথাও ঘর নেই অনন্তগামিতার পথে,
কল্পনার কাঠিন্যে মৃত্যুই শূন্যতা,
শোক !
রঙমাখানো মুখের উপর বহুযুগের  ঝলসানো তাম্রলিপি, বেঁচেবর্তে থাকাই জীবনের 
সাথে গূঢ় আঁতাত একটানা দাঁড়িয়ে পড়ে যায়...
বুকের লাশটুকুও গুম,
তরুণ কবিদের কবিতা শুনতে শুনতে  বনলতা সেন গেস্টহাউসের দরজায় তুমি 
একবার কড়া নেড়ে দিও টেবিলের একপাশে রেখে দিও অশ্রুমতী পলাশ শিমুল,
একটি আত্মহত্যা হৃৎপিণ্ডের দু'ধারে ছড়িয়ে আজকেও বহুদূর থেকে এসে অপেক্ষমাণ 
কবির জন্য কী বনলতা সেন গেস্টহাউসে একটি ঘর পাওয়া যাবে?





         আরন্যক


তোমার সাথে যাবো যেদিন অরণ্য-ভ্রমণে;
কিছুই নেবো না সাথে মায় পায়ের নরম জুতো জোড়াটিও নখের রং-পালিশ মুছে দেবো;
বিবর্ণ ঠোঁটের মতো উন্মুক্ত থাকবো সভ্যতার আস্তরণে তোমার সাথে যাবো যেদিন অরণ্য-ভ্রমণে
কিছু জংলি ফলমূল খেয়ে নেবো না হয়; পাথুরে জল আজলায় একটি প্রস্রবণও থাকবে নিশ্চয়
গা ধুয়ে খুলে দেবো মনের যতো আঁকড়
বনদেবীর মতো অশত্থ গাছটার নীচে; তুমি
নতজানু হবে সবুজ ঊরুমুখে
পৃথিবীর প্রথম শেষ সন্ধ্যার আলো নামবে
দহন সুখে অশত্থমূলে ছড়িয়ে পড়বে আলো
হারানো অরণ্যপ্রেমীরা সেই মানচিত্রে নিজেদের পথ খুঁজে নেবে; একদিন ঘরে ফিরে আসবে
ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক ছাড়া আর কিছুই থাকবে না;

তোমার সাথে যাবো যেদিন অরণ্য-ভ্রমণে





_______________________________________________

No comments:

Post a Comment